শাহিদ মোস্তফা শাহিদ::
শিমুল, পলাশের রঙ লেগে অধীর যখন প্রকৃতি, হৃদয়ে ও তখন দক্ষিন হাওয়ায় নাচন। বসন্তের রঙিন নেশা যেন যুগপৎ চেপে বসেছে প্রকৃতি ও মনে, সমান ভাবে! কোথায় যেন ক্রমাগত বেজে চলেছে মধুরতম সুরের তরঙ্গ… ‘মধুর বসন্ত এসেছে মধুর মিলন ঘটাতে ’…..
ঠিক এমনই কোন এক বসন্তের দিনে ভালবাসার অপরাধে রাজরোষের শিকার হন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। আজ থেকে হাজার বছর আগে ২৬৯ সালের এই দিনে রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস ভ্যালেন্টাইনকে দেন নিমর্ম মৃত্যুদন্ড। ক্লডিয়াস ভেবেছিলেন সেই মৃত্যুদন্ডের নিচে মৃত্যু ঘটবে অসীম ভালবাসার। কিন্তু ভ্যালেন্টাইনের আত্মদান তুচ্ছ করেছে মৃত্যুকে। ভালবাসাকে থামিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে করেছে অদম্য। যুগে যুগে দিয়েছে আরো বেশি মহত্ব ও মহিমা। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারী ভ্যালেন্টাইন ডে। ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, অষ্ট্রিয়া, জার্মানী, হাঙ্গেরীসহ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে দিবসটি উদযাপন নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু হৃদয়ের অপ্রতিরোধ্য আবেগ ও ভালবাসার কাছে হার মেনেছে বিধি নিষেধের কঠিন প্রাচীর। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির আরো অনেক কিছুর মতো বাঙালী সংস্কৃতির সাথে মিশে গেছে এই দিনটি। ভ্যালেন্টাইন ডে’র গোড়ার ইতিহাস নিয়ে অনেক ধরণের লিখা প্রচলিত থাকলেও ভালবাসা বিনিময় প্রশ্নে সব প্রেমিক হৃদয় এক ও অভিন্ন। ভালোবাসার একজন কবি ও সাহিত্যিক বলেন, ভালোবাসাকে আমি বাহুর মতো মনে করি। ‘যা নয় তোমার বাহু/ তা-ই কালো; তা-ই অন্ধকার’ উৎপল কুমার বসুর সে কবিতার মতোই আমার কাছে ভালোবাসা।’ ভালোবাসায় আছে আশ্চর্য্য এক শক্তি ও প্রেরণা। সেটাই প্রমাণ করছে, বিদ্যুৎ পাল (ছদ্মনাম) একটি কলেজে পড়ত। দীর্ঘদিনের প্রেম শেষে বিয়ে করেছেন আকবরকে (ছদ্মনাম)। তাদের দুরন্ত ভালোবাসার মাঝে দেওয়াল হতে পারেনি তাদের আলাদা ধর্ম। বিদ্যুৎ পাল বলেন, ‘ভালোবাসাতো’ মুক্ত পাখির মতো। এটা কোন বিধি নিষেধ মানে না। আর আমার ভেতরে নতুন কিছু করার সাহস, উদ্দীপনা জাগায়।’ প্রায় দু’দশক এর বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। পরিবর্তিত সভ্যতা ও সময়ের ব্যবধানে পাল্টে গেছে ভালোবাসার ধরণ। ক্রমেই ভালোবাসা হয়ে উঠেছে আরো বেশি সাহসী ও সংগ্রামী। হৃদয়ের অনুভূতি জানাতে আগে যেখানে প্রেমিক প্রেমিকাকে গুনতে হয়েছে প্রতীক্ষার দীর্ঘ প্রহর, এখন সেখানে মুহুর্তেই ইন্টারনেটে, মোবাইলে খুদে বার্তায় জানিয়ে দিচ্ছে ‘ভালোবাসি’ কথাটি। প্রযুক্তির এই উন্নতি ভালোবাসাকে একদিকে যেমন সহজ করেছে, অন্যদিকে তেমন করে তুলেছে ভীষন অস্থির ও যন্ত্রণাদগ্ধ। এমনই মনে করেছেন সমাজ বিজ্ঞানীরা।কক্সবজার সরকারী কলেজের একজন শিক্ষক বলেন, আমাদের ভালোবাসা ‘একটুকু ছোঁয়া লাগে, একটুকু কথা শুনে’ অনেকটা সেরকম ছিল। বাঙালীর সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্য ছিল সবকিছু। এখন ছেলেমেয়েরা যে ভ্যালেন্টাইন ডে উদযাপন করেছে সেটা আরো অনেক কিছুর মতোই পাশ্চাত্য থেকে নেওয়া যা আমাদের দেশজ সংস্কৃতির সাথে যায় না। তিনি আরো বলেন, ‘ভ্যালেন্টাইন ডে উদযাপনকে খারাপ ভাবে না দেখাই ভালো। কারণ ভালোবাসাতো আটকানো যায় না। এখন লক্ষ্য রাখতে হবে পাশ্চাত্যের উগ্র সংস্কৃতি যেন আমাদের ছেলে মেয়েদের গ্রাস না করে।
লেখক
সাধারণ সম্পাদক
ঈদগাহ্ রিপোর্টার্স সোসাইটি
সদর ,কক্সবজার
পাঠকের মতামত